নিঝুম মনপুরা ভ্রমন
আমাদের যাত্রা টা শুরু হয়েছিল ২৮/১১/২০ তারিখে সন্ধ্যা ৬ টায় তাসরিফ-২ লঞ্চে করে। সারা রাত লঞ্চে চাঁদনি রাত দেখতে দেখতে ভোর ৫.৩০ এর দিকে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়ায় পৌঁছে গেলাম হাতিয়া লঞ্চ ঘাটে, সেখান থেকে ১৪০০ টাকায় দুটি সি.এন.জি নিয়ে চলে গেলাম মোক্তারিয়া ঘাটে। বেলা ৮ টার দিকে পারাপারের টলার আসায় আমরা টলারে করে জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়ায় ছোট একটা নদী পার হয়ে পৌছালাম বন্দরটিলা ঘাটে, সেখান থেকে একটি ৮ সিটের গাড়ি ও একটি মটর বাইক যোগে ৪৫০ টাকায় পৌছালাম নামার বাজার। আমদের গ্রুপে আমরা ৯ জন ছিলাম, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ক্যাম্পিং, সুতরাং নামমাত্র একটা রুম নিলাম ব্যাগপত্র রাখার জন্য মসজিদ বোডিং এ দৈনিক ৫০০ করে। দুপুরের খাবার শেষ করে চলে গেলাম নামার বাজার বীচে তাবু সেটিংয়ের জন্য। যথারীতি তাবু সেট করে আশেপাশের বীচ সাইড ঘুরে সন্ধ্যার পর জোসনা উপভোগ করে নীরব বীচে কিছুক্ষণ একান্তে ছিলাম। রাতে খেলাম (আলতাফ চাচার হোটেলে) তুলনামূলক ভালো মানের খাবার, সাশ্রয়ী প্যাকেজ, সাথে ভালো ব্যবহার এবং পর্যটকদের জন্য সর্ববিষয়ে যথাসাধ্য অতিথিপরায়ণতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। রাতে তাবুতে ঘুমালাম, খুব করে বুঝতে পারছিলাম তাবুর চারপাশে শিয়ালের অবাধ বিচরণ, তবে ওরা ডিসটার্ব করে না। সকলে উঠে চাচার হোটেলে নাস্তা করে ১০০০ টাকা টলার ভাড়ায় বেলা ১০ টার দিকে গেলাম কবিরাজের চর, চৌধুরীর খাল হয়ে কমলার চরে। কবিরাজের চরে হয়তো সকালে যাওয়ায় কোনো মহিষের পাল দেখতে পাই নি, কমলার চরে সৌভাগ্যক্রমে আমি ঈষৎ হরিণের পাল চোখে মালুম করতে পেরেছি, খুবই দ্রুত যায়গা পরিবর্তন করে হরিনের পাল, খুব সম্ভবত বিকেলের দিকে গেলে আরও বেটার তৃপ্তি নিয়ে ফেরা যায়, যাই হোক বনের কেওরা গাছের শ্বাসমূল খুবই বিপদজনক, আমরা চেস্টা করেছি শক্ত জুতো নিয়ে যেতে। আসলে প্লেসগুলো আহামরি কিছু না আমার ব্যক্তিগত অভিমত, বনজঙ্গল চরাঞ্চল এলাকা, তবে হ্যা হাজার মহিষের পাল ও হরিণের পাল দেখা গেলে হয়তো এই নদী সাগর খাল বিল পাড় হয়ে যাওয়া টা সার্থক হয়। সেখান থেকে ফিরলাম ১ টার দিকে, ফ্রেস হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বিকেলে বারবিকিউ অ্যারেন্জমেন্ট গুছালাম। সন্ধ্যার পর বারবিকিউ শুরু করে পার্টি শেষ করলাম ১০ টার দিকে, রাতে আবারও নীরব বীচে নিশ্চুপ ভাবে হেটে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করলাম, চাঁদনি রাতে অদ্ভুত সুন্দর নামার বাজার বীচ টা।পরদিন সকালে উঠে নাস্তা সেরে ১৫০০ টাকা কন্টাকে ঠিক করে রাখা টলারে মনপুরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে জাহাজ ঘাটের দিকে আগালাম,,,,,,,,,,,,,,,,,
#অভিজ্ঞতাওপরামর্শ
★হাতিয়ার মানুষের ব্যবহার ক্ষেত্রবিশেষে ভালো পাই নি।
★প্রত্যেকটা যায়গায় মনে হচ্ছিল যে মুরগি হওয়ার জন্য যেহেতু একবার গিয়েছি সুতরাং ওনাদের ইচ্ছে মতো ভাড়া দিতে হবে, নো কনসিডারেশন।
★নামার বাজারের মানুষগুলো একটু পর পর এসে ডিসটার্ব করে টলার লাগবে কিনা, গাইড লাগবে কিনা, বাইক লাগবে কিনা, গাড়ি লাগবে কিনা।
★ক্যাম্পসাইডে এসে লোকজন বসে থাকে, বাচ্চা গুলো বেশি দুষ্টামি করে, হঠাৎ করে প্রায়ই দেখতাম পানির বোতল নাই।
★নীরবতার জন্য নামার বাজার বীচ বেশ ভালো, চাঁদনি রাতে অদ্ভুত সুন্দর।
★মোবাইল চার্জ করেছি বিভিন্ন দোকানে, সিম নেটওয়ার্ক রবি,এয়ারটেল,জিপি চলে অনলি।
মনপুরার দিকে যাত্রা,,,,নিঝুম দ্বীপের জাহাজ ঘাট থেকে মনপুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর ১ ঘন্টার মধ্যে বিশাল এক চ্যানেল পাড়ি দিয়ে মোটামুটি বেশ উওাল ঢেউ উপেক্ষা করে পৌছালাম স্বপ্নপূরী মনপুরায়। মনপুরায় নামলাম দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাঝির ঘাট এলাকায়। কেনো জানিনা মনপুরা পা রাখার সাথে সাথে একটা ভালো লাগা কাজ করলো, ওখানে ঐ ঘাট টা মূলত ঐ এলাকার সম্মানিত চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ সাহেবের।যথেষ্ট অতিথিপরায়ণ তার লোকজন, ঘাটের লোকজন আমাদের সেখানে ব্যাগপত্র রাখার এবং রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। খুবই আন্তরিক তারা। আমরা সবকিছু সেখানে রেখে দুপুরে ফ্রেস হয়ে আশেপাশে ভালো খাবারের হোটেল না থাকায় সোজা চলে গেলাম বাংলা বাজার। সেখানে সুবিধামত দুপুরের খাবার খেয়ে ৩ টি বাইক ঠিক করলাম ৯০০ টাকায় পুরো বিকেল সন্ধা পর্যন্ত ওনারা বাইক আমাদের দিয়ে দিলেন। বাইক নিয়ে ঘুরলাম হাজির হাট এলাকা, জজ কোর্ট, উপজেলা, ডাক বাংলা, বড় দিঘি এলাকা, মূলত টুরিস্ট দের জন্য থাকার যায়গা হচ্ছে হাজির হাট এলাকা। ইচ্ছেমতো ঘুড়ে সন্ধার মধ্যেই ফিড়লাম বাংলা বাজার, বাইক বুঝিয়ে দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ৩০০ টাকা ভাড়ায় ৮ সিটের গাড়িতে ফিড়লাম সেই মাঝির ঘাট, রাতে পার্শ্ববর্তী দখিনা হাওয়া সী বীচে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমাদের চারজন তাবুতে স্টে করলো, বাকিরা সেই মাঝির ঘাটে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যাগপত্র গুছিয়ে আগের রাতের সেই গাড়িতে কন্ট্রাক্ট অনুযায়ী ৭০০ টাকা ভাড়ায় বাংলা বাজার এসে সকালের নাস্তা করে মনপুরা লঞ্চ ঘাটের উদ্দেশ্যে গ্রামের কিছু পথ ঘুড়িয়ে ঘাটে পৌঁছে দিলো ১২.৩০ এর দিকে। সেখান থেকে লঞ্চে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়ায় ফারহান-৪ লঞ্চে ঢাকা চলে আসি।
৩ রাত ৪ দিনের এই ট্যুরে আমাদের খরচ হয়েছিলো ২৬৫০ টাকা করে জনপ্রতি।
#অভিজ্ঞতাওপরামর্শ
★শুধু এইটুকু ভেবেছি সামান্য একটা নদীর এপার আর ওপারের মানুষের মাঝে এতো অমিল, ট্রুলি মনপুরার মানুষের ব্যবহার ভালো পেয়েছি সব যায়গায়।
★ওরা যথেষ্ট আন্তরিক ও হাসিখুশি।
★গ্রামের চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ সাহেব যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষের জন্য এবং পর্যটকদের জন্য গ্রামটা সবদিক থেকে গুছিয়ে রাখতে।
★গ্রামের প্রতিটা রাস্তাঘাট পাকা করা এবং অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতেই হবে ঐ আসনের মাননীয় সংসদ জনাব আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যকব সাহেবকে, বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ওনার উন্নয়ন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
★কোথাও কেউ সামান্য ডিসটার্ব করেন নি।
★মোবাইল চার্জ করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বাজার এলাকা ছাড়া চার্জ দেয়া যায় না।
★রবি, জিপি, এয়ারটেল ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও অন্যগুলো একদমই না।
যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি সুন্দর জায়গাগুলো সুন্দরই রাখতে, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
Comments and suggestion highly accepted
ReplyDelete